ছোট সোনা মসজিদ: ঐতিহাসিক এক স্থাপত্য নিদর্শন
![]() |
ছোট সোনা মসজিদ এর ইতিহাস |
বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য ও ইসলামী ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন ছোট সোনা মসজিদ। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটি "সুলতানি আমলের রত্ন" নামে পরিচিত এবং মধ্যযুগীয় বাংলার স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম সেরা উদাহরণ।
ইতিহাস ও নির্মাণকালঃ ছোট সোনা মসজিদের নির্মাণকাল প্রায় ১৫ শতকের শেষভাগে, সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯) শাসনামলে। মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তার রাজসভাসদ ওয়ালী মোহাম্মদ। এটি সুলতানি স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ, যা বাংলার স্থাপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
স্থাপত্যশৈলীঃ মসজিদটি আকারে ছোট হলেও এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। এটি এক গম্বুজবিশিষ্ট চতুষ্কোণ আকৃতির একটি মসজিদ, যার অভ্যন্তরে তিনটি মেহরাব রয়েছে। মসজিদের বাইরের দেয়ালে সুন্দর পাথরের খোদাই কাজ এবং ভেতরে নিখুঁত কারুকাজ করা হয়েছে। মসজিদের ছাদে সোনালি রঙের আবরণ থাকায় এটি "ছোট সোনা মসজিদ" নামে পরিচিতি পায়।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৮ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। এর পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে মধ্যবর্তী গম্বুজটি তুলনামূলক বড়। মসজিদের দেওয়ালে টেরাকোটা ও পাথরের জটিল খোদাই করা নকশা সুলতানি আমলের স্থাপত্যে মুসলিম শিল্প-সংস্কৃতির দক্ষতা প্রকাশ করে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বঃ ছোট সোনা মসজিদ শুধু একটি প্রার্থনাস্থল নয়; এটি বাংলার সুলতানি শাসনামলের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবহন করে। এই মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যে তৎকালীন শিল্পীদের সৃজনশীলতার পরিচায়ক। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এটি আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান।
সংরক্ষণ ও গুরুত্বঃ ব্রিটিশ আমল থেকে ছোট সোনা মসজিদ সংরক্ষণের আওতায় আসে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান।
উপসংহারঃ ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের গৌরবময় একটি অধ্যায়। এর নান্দনিক কারুকাজ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমাদের অতীতের সোনালি অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই মসজিদটি প্রাচীন বাংলার ইসলামী স্থাপত্যের অমর স্মারক।
0 Comments